কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে

কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে ও বর্ষাকালে কোন ফসল ভালো জন্মে এই সব তথ্য গুলো সম্পর্কে বুজতে ও জানতে হলে আমাদের সাথেই থাকুন। তাহলে আপনি কোন ঋতুতে কোন ধরনের ফসল হয় এইসব কথা গুলো জানতে পারবেন।

কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মেএই পোষ্টের নিচের দিকে ফসল সম্পর্কে আপনার জন্য কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। সে পয়েন্ট গুলো যদি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পরেন। আশাকরি তাহলে আপনি ফসল সম্পর্কে সকল বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।

ভূমিকা

ফসল বলতে মানুষের ব্যবহারের জন্য চাষাবাদযোগ্য উদ্ভিদ বা তার অংশকে বুঝায়। ফসল হতে পারে খাদ্য, পশুখাদ্য, আঁশ , তৈল, মসলা, ফুল, ভেষজ ইত্যাদি। ফসল চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেন এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশে ফসল চাষের মৌসুম অনুযায়ী ফসলকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। খারিফ, রবি ও কাতক।


খারিফ ফসল হলো বর্ষাকালে চাষ করা ফসল, যেমন ধান, জুট, আউশ, কালাই, খেসারি ইত্যাদি। রবি ফসল হলো শীতকালে চাষ করা ফসল, যেমন গম, সরিষা, মসুর, মুগ, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি। কাতক ফসল হলো গ্রীষ্মকালে চাষ করা ফসল, যেমন বোরো, তিল, মুগ, ভুট্টা, কুমড়া, লাউ, কাকরা ইত্যাদি। ফসল চাষের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

যেমন, উচ্চফলনশীল জাত, সার, সেচ, পোকা-রোগ নিয়ন্ত্রণ, মাটি উন্নয়ন, মালচার, কাটা-বাঁধা, ফসল বিনিময়, ফসল সংরক্ষণ ইত্যাদি। এগুলো ফসলের উৎপাদন ও গুণমান বাড়াতে সাহায্য করে। ফসল চাষের সময় কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। যেমন, অপর্যাপ্ত বৃষ্টি, বন্যা, শুকনা, লবণভূমি, পোকা-রোগ, মাটির উর্বরতা কমে যাওয়া।

ফসলের দাম কমে যাওয়া, ফসলের সংরক্ষণ ও বিপণনের অসুবিধা ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য কৃষকদের প্রযোজ্য প্রযুক্তি, পরামর্শ, ঋণ, বীমা, সমর্থন মূল্য ও বাজার ব্যবস্থা প্রদান করা উচিত। ফসল চাষ করে কৃষকরা নিজেদের ও দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ফসল চাষ করে কৃষকরা নিজেদের ও দেশের খাদ্য

নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। রোজগার সৃষ্টি করেন, আয় বাড়ান, রাষ্ট্রীয় আয়ের অংশ হিসেবে কর দেই। রপ্তানি করে মুদ্রার প্রবাহ বাড়ান, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করেন এবং সামাজিক সম্পর্ক ও সংস্কৃতি বিকাশে অবদান রাখেন। আপনি যদি ফসল চাষে আগ্রহী হন তবে আপনি বিভিন্ন কৃষি চিকিৎসকের থেকে ফসল চাষের বিষয়ে আরও জানতে পারেন।

কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে

ফসল চাষের জন্য ঋতুর গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফসলের চাহিদা ও উপযোগিতা থাকে। বাংলাদেশে সাধারণত ছয়টি ঋতু থাকে- বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও শীত। এই ঋতুগুলোর মধ্যে কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে তা জানতে হলে আমাদের কিছু কারণ বিবেচনা করতে হবে। যেমন- ফসলের জাত, মাটির প্রকৃতি, আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত,

সেচ, পরিচর্যা, রোগ-পোকা ইত্যাদি। এই কারকগুলো ঋতু অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। তাই একই ফসল সব ঋতুতে একই রকম ফলন দেয় না।আমি আপনাকে কিছু উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে চাই। ধান হলো বাংলাদেশের প্রধান ফসল। এটি বার্ষিক ফসল হিসেবে তিনটি মৌসুমে চাষ করা হয়- আউশ, আমন ও বোরো। আউশ ধান বসন্ত ঋতুতে বোনা হয় এবং বর্ষা ঋতুতে কাটা হয়।

এই ধানের জন্য বৃষ্টিপাত ও সেচ প্রয়োজন। আমন ধান বর্ষা ঋতুতে বোনা হয় এবং শীত ঋতুতে কাটা হয়। এই ধানের জন্য বৃষ্টিপাত ও জলবদ্ধতা প্রয়োজন। বোরো ধান শীত ঋতুতে বোনা হয় এবং গ্রীষ্ম ঋতুতে কাটা হয়। এই ধানের জন্য সেচ ও উষ্ণতা প্রয়োজন। তাই আমরা বলতে পারি যে ধানের বিভিন্ন জাত বিভিন্ন ঋতুতে ভালো ফলন দেয়।

আবার কিছু ফসল শীতকালীন হিসেবে চাষ করা হয়। যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, গাজর, লাউ, সীম, টমেটো, আলু ইত্যাদি। এই ফসলগুলো শীত ঋতুতে ভালো ফলন দেয় কারণ এই ঋতুতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে বৃষ্টিপাতও কম হয়। এই ফসলগুলো গ্রীষ্ম ঋতুতে ভালো ফলন দেয় না কারণ এই ঋতুতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি থাকে বৃষ্টিপাতও বেশি হয়।

এই ফসলগুলো গ্রীষ্ম ঋতুতে রোগ-পোকা আক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।এভাবে আমরা বলতে পারি যে কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে তা নির্ভর করে ফসলের জাত, মাটির প্রকৃতি, আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত, সেচ, পরিচর্যা, রোগ-পোকা ইত্যাদির উপর। আরো দেখা যায় গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে ফলমূল, শাকসবজি, ধান, মসুর এবং আলু ইত্যাদি ফসল ভালো জন্মে।


আবহাওয়ার প্রভাবে ফসলের জন্ম পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শীতকালে প্রধানত শীতজনিত ফসল যেমন গম, সরিষা এবং মসুর জন্মে। আপনি আপনার জমির ধরণ এবং আবহাওয়া উপযোগী ফসল জানতে পারেন এবং তার উপর ভিত্তি করে ফসল চাষ করতে পারেন।

কোন মাসে কোন সবজি চাষ হয়

সবজি চাষের ক্ষেত্রে প্রত্যেক টি মাস খেয়াল রেখে বীজ রোপন করা উচিত। তাহলে আপনার ফলন অনেক ভালো হবে। কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় তা জানতে হলে আপনি নিচের পয়েন্ট গুলো পড়ুন। প্রত্যেকটি মাসে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়।

সবজি চাষের সময় বীজ রোপন করা উচিত এবং সময়ের সাথে সাথে পরিচর্য করা উচিত। নিচে বাংলাদেশে প্রতিটি মাসে কোন সবজি চাষ করা হয় তা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হলো-

  • জানুয়ারি মাসে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, গাজর, বিট, মটরশুটি, বাঁধাকপি, মাশরুম, পালং শাক, শালগম, মূলা।
  • ফেব্রুয়ারি মাসে মটরশুটি, গাজর, বিট, লেটুস, সবুজ সালাদ এর পেঁয়াজ, মটর, মূলা, পালং শাক, গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি, রসুন, শ্যালটস, প্রারম্ভিক আলু, শসা, টমেটো বীজ।
  • মার্চ মাসে লেটুস, মূলা, প্রারম্ভিক শালগম, পালং শাক, ব্রকলি, মটর, শালগম, পার্সনিপস, ফুলকপি, শসা, ব্রাসেল স্প্রাউট, কাঁচামরিচ, মিষ্টি মরিচ, ধনিয়া।
  • এপ্রিল মাসে ভুট্টা, ব্রকলি, বিট, কালে, সবুজ পেঁয়াজ, মিষ্টি ডাল, বেল মরিচ, পালং শাক, ব্রাসেলস স্প্রাউট, রুবার্ব, শালগম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, আলু।
  • আরো বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয় বাংলাদেশে।

বর্ষাকালে কোন ফসল ভালো জন্মে

বর্ষাকালে কোন ফসল ভালো জন্মে এ বিষয়ে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আপনার এলাকার মাটি ও পরিবেশের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসল সম্পর্কে জানা যাবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফসল ভালো ফলন হয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, পাবনা এলাকায় আম, লিচু, গম, ধান এই ফসলগুলো ভালো জন্মায়।

আবার সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এলাকায় চা, আনারস এই ফসলগুলো ভালো জন্মায়। বর্ষাকালে সাধারণত বেশি বৃষ্টিপাত হয়, তাই বর্ষাকালে যেসব ফসল ভালো জন্মায় তাদের মধ্যে কিছু হলো চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, পটল, পেঁপে, বেগুন, করলা, সিসিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পুঁইশাক, কাঁকরোল ইত্যাদি। এছাড়া আপনি বর্ষাকালে কোন ফসল ভালো জন্মে

এ বিষয়ে আরো জানতে হলে নিচের পয়েন্টগুলো পড়ুন তাহলে বুজতে পারবেন আপনি। এছাড়াও বর্ষাকালে ফসলের উৎপাদন বিভিন্ন কারণে প্রভাবিত হয়। উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, জমির ধরন এবং পরিবেশের অন্যান্য উপাদানগুলি ফসলের উৎপাদন প্রভাবিত করে। বর্ষাকালে বাংলাদেশে কিছু ফসল ভালো জন্মে যেমন ধান, আলু, কমলা, জলপাই,

জামরুল, কাঁঠাল, মালটা ইত্যাদি। এই ফসলগুলো বর্ষাকালে ভালোভাবে উৎপাদন হয়ে থাকে। এই ফসলগুলো অনেক সুস্বাদ এবং অধিক পুষ্টিমান। আপনি চাইলে এ ফসলগুলো বর্ষাকালে উৎপাদন করতে পারেন। এবং আপনি অধিক লাভবান হতে পারেন।

কোন মৌসুমে কোন ফসল ভালো জন্মে

বাংলাদেশে ছয় ঋতুর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ফসল উৎপাদনের জন্য জলবায়ুর ভিত্তিতে সারা বছরকে প্রধান দুটি মৌসুম হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল রবি মৌসুম ও খরিপ মৌসুম। রবি মৌসুমে বাংলাদেশে গম, সরিষা, মটর, আলু, টমেটো, বেগুন, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদি ফসল চাষ করা হয়।

রবি মৌসুম হল শীতকালীন মৌসুম, যেটি অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে। রবি মৌসুমে বৃষ্টি কম হয় এবং তাপমাত্রা নিম্ন থাকে। রবি ফসল গুলো শীতল আবহাওয়া পছন্দ করে। খরিপ মৌসুমে বাংলাদেশে ধান, জুট, কাঁচা কলা, কলমি শাক, লাল শাক, পাটল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কুমড়া, তরমুজ, আদি ফসল চাষ করা হয়।

খরিপ মৌসুম হল বর্ষাকালীন মৌসুম, যেটি এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। খরিপ মৌসুমে বৃষ্টি বেশি হয় এবং তাপমাত্রা উচ্চ থাকে। খরিপ ফসল গুলো উষ্ণ আবহাওয়া ও বেশি জল পছন্দ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে কিছু ফসল বা উদ্ভিদ সেখানে বেশি জন্মে। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,


বগুড়া, নওগাঁ, পাবনা এলাকায় আম, লিচু, গম, ধান ভালো জন্মে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এলাকায় চা, আনারস ভালো জন্মে। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা এলাকায় নারিকেল, সুপারি, ধান, বাদাম, তরমুজ, পান পাতা ভালো জন্মে।

এই তথ্যগুলো সাধারণ হিসেবে প্রযোজ্য হলেও, নির্দিষ্ট এলাকার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ফসল নির্ধারণ করতে হলে সেই এলাকার আবহাওয়া, মাটির ধরণ, জলবায়ু এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণগুলো বিবেচনা করা প্রয়োজন।

শেষ কথা

আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url