খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি

খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি এবং মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ এসব সম্পর্কে চলুন জেনে নি। মুরগি সম্পর্কে জানতে হলে আপনি আমাদের সাথেই থাকুন। তাহলে আপনি মুরগি সম্পর্কে সকল তথ্য বুজতে পারবেন।
খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি
এই পোষ্টের নিচে মুরগি সম্পর্কে নিচে কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। এই পোষ্টর পয়েন্ট গুলো যদি আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন। আমি আশা করি আপনি মুরগি সম্পর্কে সকল বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।

ভূমিকা

মুরগি হল একধরনের গৃহপালিত পাখি, যার মাংস ও ডিম মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মুরগি প্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে পালন করা হয়েছিল এবং তারপর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মুরগি পালন করে মানুষ প্রোটিন, শক্তি, শর্করা, আয়রন, সোডিয়াম এবং ভিটামিন সি পায়। মুরগি পালন করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন ছেড়ে পালন,


খাঁচায় পালন বা মাচায় পালন। ছেড়ে পালন করলে মুরগি নিজের খাবার নিজে খুঁজে নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু রোগ বা শত্রুর আক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। খাঁচায় পালন করলে মুরগির মৃত্যুর হার কমে যায়, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও রোগ নিরাময় করা খুব সহজ হয়ে থাকে। মাচায় পালন করলে মুরগির জন্য আলো-বাতাস ও স্থান বেশি থাকে, যা তাদের সুস্থ রাখে।

মুরগি পালন করে মানুষ পরিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে পারে। দেশি মুরগির মাংস ও ডিমের দাম বিদেশি মুরগির চেয়ে বেশি থাকে। দেশি মুরগি পালন করতে চাইলে ভালো মানের মোরগ, মুরগি নির্বাচন করতে হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করলে বেশি ডিম ও মাংস উৎপাদন করা যায়।

খাচায় দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি

খাচায় দেশি মুরগি পালন একটি উপযোগী ব্যবসার কারণ হয়ে থাকে। দেশি মুরগি খাচায় পালন করার কারণে মুরগির মৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করে এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা ও বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করা সহজ হয়ে থাকে। দেশি মুরগি খাচায় পালন করে আবদ্ধ অবস্থায় করা যেতে পারে। খাচায় পালন করলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়। দেশি মুরগি পালনের জন্য

একটি উন্নত বাসস্থান তৈরি করা হয় যেখানে সব সময় খাবার ও পানি থাকে এবং অতিরিক্ত গরম এবং ঠান্ডা নিয়ন্ত্রন করা হয় যাতে মুরগি গুলোর কোন ধরনের সমস্যা না হয়। এই মুরগিদের উন্নত মানের খাদ্য খাওয়ানো হয় এতে মুরগির গ্রোথ ভালো হয় এবং মুরগির ওজন ও বেশি হয়। দেশি মুরগি পালনের জন্য খাচার ভিতর একটি খাঁচা তৈরি করা হয় যা মুরগির সংখ্যার উপর

নির্ভর করে এক তলা বা বহু তল তৈরি করা হয়। খাঁচাগুলোর মাপ হলো ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা, ১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উচ্চতা এইভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে মুরগির গ্রোথ ও ওজন ভালো হয় এবং মাংস ও ডিমের দাম ও চাহিদা বেশি থাকে। খাচায় মুরগি পালনের কিছু নিয়ম নিচে দেওয়া হলো-

  • মুরগির ঘর বা শেড মুরগির জন্য আধুনিক বাসস্থান তৈরী করা হয়ে থাকে। এখানে আপনি সব সময় খাবার ও পানি থাকে এবং অতিরিক্ত গরম এবং ঠান্ডা নিয়ন্ত্রন করা হয়।
  • আপনাকে খাদ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করতে হলে উন্নত মানের খাদ্য খাওয়ানো প্রয়োজন।
  • মুরগির জাত পরিচিতি বাংলাদেশে তিনটি জাতের দেশি মুরগি পালন করা হয় সে গুলো হলো- কমনদেশী জাত, হিলি জাত ও গলাছিলা।
  • আপনারা হয়তো যানেন না যে বাচ্চা উৎপাদন করতে হলে মুরগির ডিম সংগ্রহ করে ইনকুবেটর এর মাধ্যমে বাচ্চা উৎপাদন করা হয়।
  • রোগ ব্যবস্থাপনা আধুনিক পদ্ধতিতে খাচায় দেশি মুরগি পালন করলে রোগ বালায়ের সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।
  • তবে, মনে রাখতে হবে যে আপনি যদি যেকোনো মুরগি পালন করেন সে ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুরগির ঝিমানো রোগের ঔষধ

মুরগির ঝিমানো রোগ হতে পারে বিভিন্ন কারণে, যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, কক্সিডিওসিস, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদি। এই রোগের চিকিৎসা করতে হলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের মরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, ভিটামিন বা অন্যান্য ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া মুরগির খাদ্য, পানি, বিছানা ও পরিবেশের উপর নজর রাখতে হবে।


আপনি যদি মুরগির ঝিমানো রোগের বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আপনি নিচের পয়েন্ট গুলো পড়ুন। এখানে আপনি মুরগির রোগের লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসার সম্পর্কে জানতে পারবেন। মুরগির ঝিমানো রোগ একটি সাধারণ নাম যা বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা করার জন্য আপনার মুরগির বয়স, ওজন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের

উপর নির্ভর করে ঔষধ নির্বাচন করা হয়। আপনি মুরগির চিকিৎসা করার জন্য একজন মুরগির ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। এছাড়াও আপনি মুরগির ঝিমানো রোগ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন। মুরগির ঝিমানো রোগ সম্পর্কে বুঝতে হলে মুরগির ঝিমানো রোগ সম্পর্কে আগে জানতে হবে। মজার বিষয় হলো মুরগির ঝিমানো

রোগে নামে মুরগির কোনো রোগই আসলে নেই। এটি রোগের একটি উপসর্গ মাত্র। যে কোনো রোগেই মুরগি ঝিমাতে পারে। রানিক্ষেত, গামরোরো, এভিয়ান ইনফ্লুয়েন্জা, কক্সিডিওসিস (আমাশয়), মাইকোপ্লাজমা (ঠান্ড)) ইত্যাদি রোগে মুরগি ঝিমাতে পারে। মুরগির ঝিমানো রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মরামর্শ অনুসারে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।

একজন চিকিৎসক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে রোগ নির্ণয় পূর্বক চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে। মুরগির বাচ্চার বয়স ১০-১৫ দিন হলে আর মাথা ঝিমোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যামোক্সিসিলিন অথবা মোক্সাসিলিন অথবা কলিস্টিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে। ফুসিড ট্যাবলেট ১টি ২ লিটার 

পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১ দিন খাওয়াতে হবে। আপনাকে মুরগিকে স্যালাইন খাওয়াতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যেকোনো ঔষুধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ

দেশি মুরগি পালন একটি উপযোগী ব্যবসা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। দেশি মুরগি পালন করার জন্য আপনাকে প্রথমে দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। দেশি মুরগি পালন এর জন্য আপনাকে একটি খোলামেলা ঘর তৈরি করতে হবে। সেখানে মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধা থাকবে। দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ হলো

একটি উপকারী ও লাভজনক কার্যক্রম। দেশি মুরগি পালন করে আপনি পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে পারেন। দেশি মুরগি পালনের জন্য আপনাকে ভালো মানের মুরগি নির্বাচন, সঠিক ব্যবস্থাপনা, খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা, রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা, ডিম ও মাংস উৎপাদন ও বিক্রয় সম্পর্কে জানতে হবে। দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিতে আপনি

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে যোগাযোগ করতে পারেন। যেমন, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বি,এল,আর,আই), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি উন্নয়ন সংস্থা, ব্র্যাক, প্রকৃতি বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি।


এছাড়া অনলাইনেও আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক গ্রুপ থেকে দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিতে আপনার জন্য নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো-

  • দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ ও সমস্ত তথ্য পাওয়া যায় আধুনিক পদ্ধতিতে।
  • দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ নিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যায়।
  • দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় বানিজ্যিকভাবে দেশি মুরগির খামার ব্যাবস্থাপনা থেকে আপনি মুরগি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাবেন।
  • এই তথ্যগুলো আপনার দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণে সাহায্য করবে। তবে, সঠিক প্রশিক্ষণ পেতে আপনার স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি

দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আপনি এই পোষ্টটি ভালো করে পড়ুন। এই পোষ্টটিতে দেখানো হয়েছে দেশি মুরগিকে এবং বাচ্চাকে কি কি খাবার দিতে হয়। দেশি মুরগি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। অল্প পুজিতে এই ব্যবসা শুরু করা যায়। দেশি মুরগি ছাড়া অন্য মুরগি পালন করলে লাভ বেশি হয় কেননা ওই মুরগির খাবার খরচ বেশি লেগে থাকে।

এতে বাচ্চা মরটালিটি ৯৯% কম হয়। দেশি মুরগির বাচ্চা পালন করতে হলে আপনাকে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।সে গুলো হলো-

  • বাচ্চা উঠানোর পূর্বে ব্রুডার ঘরের সমস্ত জিনিস ভালোভাবে পরিস্কার করে ব্রুডার তৈরি করতে হবে।ঘরের চারপাশে কাপরের পর্দা দিতে হবে।
  • বাচ্চা আসার ১০ মিনিট আগেই পানির পাত্র এবং খাবার পাত্র যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে।
  • ঘরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা হবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং প্রতি সপ্তাহে ৩ ডিগ্রি করে কমিয়ে নিতে হবে।
  • বাচ্চাদের প্রতি দিন পানি এবং খাবার দিতে হবে। প্রথম সপ্তাহে বাচ্চাদের প্রতি কেজি খাবারের জন্য ১৫০ গ্রাম পানি দিতে হবে।
  • সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে।
  • আপনকে খাবার হিসেবে বাচ্চাদের প্রথম ১০ দিন প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ স্টার্টার ক্রাম দিতে হবে। তারপর গ্রোয়ার ক্রাম দিতে হবে।
  • আপনাকে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে এদেরকে যথাযথ টিকা দিতে হবে।
  • আপনাকে প্রথম ৭ দিনে নিউকাসল ও আইবিডি টিকা, ১৪ দিনে ফাউল পক্স টিকা, ২১ দিনে নিউকাসল টিকা এবং ২৮ দিনে আইবিডি টিকা দিতে হবে।
  • মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়া ২.৫ সে.মি (১ ইঞ্চি) করে সম্পূর্ণ ঘরে বিছিয়ে দিতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে আপনি যদি দেশি মুরগি পালন করেন তাহলে আপনার জন্য প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা আপনি পাবেন।

শেষ কথা

আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url