উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম

উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম এবং কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয় এইসব সম্পর্কে চলুন জেনে নি। গরুর বিষয় সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে হলে এই পোষ্টটি আপনি পড়ুন তাহলে গরুর সকল বিষয় বুজতে পারবেন।
উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম
অনেক সময় গরুর জাত ও কোন ধরনের গরু এসব সম্পর্কে মানুষ খুব সহজে বুঝতে পারে না। আপনাদের জন্য গরুর বিষয় সম্পর্কে নিচে কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। সে সমস্থ পয়েন্ট গুলো আপনি যদি পড়েন তাহলে আপনি গরু সম্পর্কে সকল বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।

ভূমিকা

গরু হল একটি গৃহপালিত পশু যা মানুষের জীবনে অনেক উপকার করে। গরু একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী যার চারটি পা, একটি লেজ, দুইটি শিং এবং একটি দীর্ঘ মাথা আছে। গরু বিভিন্ন রঙের হতে পারে যেমন লাল, কালো, সাদা, হলুদ ইত্যাদি। গরু মূলত তৃণভোজী প্রাণী যা ঘাস, খড়, গাছের পাতা, ভাতের ফ্যান ইত্যাদি খায়।

গরু মানুষের কৃষিকাজে, পরিবহনে, দুধ ও মাংসের জোগানে সাহায্য করে। গরুর দুধ খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। গরুর দুধ থেকে দই, ছানা, মাখন, ঘি, পনির, মিষ্টি ইত্যাদি তৈরি করা হয়। গরুর মাংস ও চামড়া ব্যবহার করে মানুষ নানারকম পণ্য তৈরি করে। গরুর গোবর কৃষিক্ষেত্রে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গরু একটি শান্ত ও নিরীহ প্রাণী গরুর শরীর বড় এবং শক্তিশালী।


এর মুখে একটি বড় জিহ্বা এবং একটি সেট শক্তিশালী দাঁত রয়েছে যা ঘাস এবং অন্যান্য খাদ্য চুলানোর জন্য উপযুক্ত। গরু মানুষের সাথে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব রাখে। গরু আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ। গরুর প্রতি আমাদের যত্ন ও সদয়তা দেখানো উচিত। গরু পালনে আমাদের উৎসাহিত হওয়া দরকার যাতে আমরা নানাভাবে উপকৃত হতে পারি।

উন্নত জাতের গরুর বীজের নাম

উন্নত জাতের গরুর বীজ বা সিমেন হলো উন্নত জাতের ষাঁড়ের শুক্রাণু যা কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহার করা হয়। আমাদের বাংলাদেশে যেসকল উন্নত জাতের গরুর হিমায়িত বীজ পাওয়া যায় তাদের নাম হলো-
  • রেড চিটাগাং এই গরুটি বাংলাদেশী গরু।
  • ফ্রিজিয়ান এই গরুর জাতটি দুধ দেওয়ার জন্য বেশি ভালো ও উপযোগী।
  • ব্রাহমা এই গরুর জাতটি মাংস খাওয়ার জন্য বেশি ভালো ও এই গরুর অনেক ওজন হয়ে থাকে।
  • শাহীওয়াল এই গরুটিতে দুধ দেয় অনেক বেশি আর গরুটির মাংসতে স্বাদও আছে ভালো।
  • গির এই গরুর জাতটিও ভালো দুধ দেয় আর গরুটির ভালো ওজন হয়ে থাকে।
  • ফ্লেকভি এই জাতটি ভালো দুধ দেওয়ার পাশা পাশি গরুটির ওজনও অনেক হয়ে থাকে।
এছাড়াও আরও কিছু উন্নত জাতের গরুর বীজ আমদানি করা হয় যেমন- হলস্টেইন, জার্সি, সিন্ধি, এসব ছাড়া আরওগরুর বীজের দাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গরুর জাত, ব্লাড পার্সেন্টেজ, প্রজননকারীর দক্ষতা, অবস্থান ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। গরুর বীজের দামের একটি গড় তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-

  • মূল্যরেড চিটাগাং-১০০% দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • ফ্রিজিয়ান-৮৭%দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • ফ্রিজিয়ান-১০০% দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • শাহীওয়াল-৮৭%দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • শাহীওয়াল -১০০% দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • গির-১০০% দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • ফ্লেকভি-১০০% দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
  • ব্রাহমা-১০০% দাম ১৪৫০থেকে ১৬০০ টাকা মতো হয়ে থাকে।
এই তালিকাটি কোন নির্ধারিত মূল্য নয়। স্থান ভেদে এই দামের অনেক কম ও বেশি দামেও বীজ প্রদানের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজনন করান হয়।

কোন জাতের গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়

একটি গরুর দুধ দেওয়ার পরিমাণ তার জাত, বয়স, গর্ভাবস্থা, দুধ দেওয়ার সময়, খাদ্য এবং পানির মাত্রা, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, পরিবেশ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। সাধারণত, একটি গরুর দুধ দেওয়ার পরিমাণ প্রথম দুই মাসে সর্বোচ্চ হয় এবং তারপরে ধীরে ধীরে কমে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদনকারী গাভী হলস্টাইন ফ্রিজিয়ান গরুর জাত।


এখন পর্যন্ত দুধ উৎপাদনের যতো রেকর্ড আছে সবই এই জাতের গাভী দক্ষলে। মাংসের বাজারেও এদের রয়েছে সরব উপস্থিতি। সারা বিশ্বে মোট উৎপাদিত দুধের প্রায় ৫০ শতাংশ এই জাতের গরু থেকে দুধ পাওয়া যায়। এই জাতের গাভী দিনে ৮ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। তবে বাংলাদেশে শাহিওয়াল, অস্ট্রেলিয়া ও হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু বেশি দুধ দেয়।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে অন্যান্য জাতের গাভী নিয়ে আসা হয়। যেমন, ফ্রিজিয়ান গাভী, শাহীওয়াল গাভী, জার্সি গাভী এবং সিন্থী গাভী। এই জাতের গাভীগুলো বছরে ২০০০ থেকে ২৫০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। এই সব গরু বাদে আরো কিছু ভারতীয় গরুর জাত রয়েছে যেগুলো প্রতিদিন বেশি দুধ দিতে পারে, যেমন গির, সাহিওয়াল, লাল সিন্ধি ইত্যাদি।

এই জাতের গরুরা প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার, পরিচর্যা এবং উপযুক্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন ১০-১২ লিটার দুধ দিতে পারে। আপনি যদি গরু পালন করতে চান, তাহলে আপনার উদ্দেশ্য ও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী গরুর জাত বাছাই করতে হবে। যদি আপনি দুধের জন্য গরু পালতে চান তাহলে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান বা জার্সি জাতের গরু ভালো হবে।

এই জাতের গরু গুলো প্রচুর পরিমাণে দুধ দিয়ে থাকে। এদের গায়ের রং সাধারণত সাদা কালো মিশিয়ে হয়ে থাকে। এই ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুর ওজন ৩৫০ থেকে ৪০০ কেজি হয় এবং গাভি গরুর ওজন ১৮০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত হয়, এমনকি এর চাইতে বেশি ওজনও হতে পারে।

কোন জাতের গরু বেশি বড় হয়

গরুর আকার ও ওজন বিভিন্ন জাতের উপর নির্ভর করে। গরু বিভিন্ন জাতের হতে পারে যেমন-হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহীওয়াল, অস্ট্রেলিয়া, সিন্ধি, ব্রাহমা, ইত্যাদি।সাধারণত, ব্রাহমা জাতের গরু অন্যান্য জাতের গরুর চেয়ে বেশি বড় হয়। এই জাতের গরু দেখতে অনেকটাই দেশি গরুর মতো, কিন্তু আকৃতিতে বেশ বড় হয়।

এই গরুর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মতো এ গরু গুলোর গায়ে চর্বি কম হয় যে কারণে পুষ্টিগুণ বেশি। ব্রাহমা জাতের গরু মূলত মাংসের জাত বলে পরিচিত। দুধের জন্য এই গরুর তেমন খ্যাতি নেই কিন্তু সাধারণত একটি পূর্ণবয়স্ক ব্রাহমা জাতের ষাঁড়ের ওজন ৪০০ কেজি থেকে ৫০০ কেজির বেশি হতে পারে। ব্রাহমা জাতের গরু বাংলাদেশে উৎপাদন ও পালন

নিষিদ্ধ না হলেও ২০১৬ সালে এক নীতিমালা দিয়ে এই জাতটিকে আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক করা ব্রাহমা গরুগুলিকে আনা হচ্ছিলো ফ্রিজিয়ান জাত বলে ঘোষণা দিয়ে। যদি আপনি মাংসের জন্য গরু পালতে চান তাহলে ব্রাহমা, শাহীওয়াল, সিন্ধি বা


অন্যান্য জাতের গরু ভালো হবে। এই জাতের গরু গুলো মাংসের জন্য পালিত হয় এবং এর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মতো। এই জাতের গরু গুলো বেশি ওজন হয় এবং এর গায়ে চর্বি কম হয়। এই জাতের গরু গুলো তাপমাত্রা সহনশীল হয় এবং রোগ বালাইও অন্যান্য জাতের চেয়ে কম হয়।

বিভিন্ন ধরনের গরুর জাত চেনার উপায়

একটি গরুর জাত চেনার উপায় হল তার শারীরিক গুণমান এবং বৈশিষ্ট্য দেখে চেনা যায়। গরুর জাত চেনার উপায় বিভিন্ন ধরনের হতে পারে কিন্তু সাধারণত গরুর রং, আকৃতি, শিং, চামড়া, ওজন এবং দুধের পরিমাণ দিয়ে গরুর জাত চেনা যায়। বাংলাদেশে সাধারণত দেশি ও উন্নত জাতের গরু পাওয়া যায়।

দেশি গরুর ওজন ১২০ থেকে ১৮০ কেজি হয়ে থাকে। দেশি গরুর দুধের পরিমাণ কম হলেও পুষ্টিগুণ বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের গরুর জাত চেনার উপায় গুলো হলো-

দেশি গরুর জাত, দেশি গরুর চামড়া শক্ত হয় এবং সাধারণত এক রং এর হয়ে থাকে। পা গুলো চিকন হয়ে থাকে এবং গলার নিচে চামড়া বা কাঠা কম ঝুলে থাকে। শিং গুলো মাঝারি ও বড় আকৃতির হয়।

সিন্ধি গরুর জাত, সিন্ধি গরু দেখতে গাড় লাল রংয়ের অথবা কালচে লাল রংয়ের হয়ে থাকে। মোটা তীক্ষ সিং এবং অভিজাত চেহারা সিন্ধি গরুকে অন্য সকল জাত থেকে সহজেই আলাদা করে রেখেছে।

গির জাতের গরু, গির জাতের গরু দেখতে অসাধারণ, প্রচন্ড রোগ প্রতিরধী ও কর্মঠ। বাংলাদেশে বর্তমানে এ জাতের গরুর বীজ পাওয়া যায়।

উন্নত জাতের গরু হলো বিদেশি জাতের গরুর সাথে দেশি গরুর মিশ্রণে তৈরি করা গরু। উন্নত জাতের গরু দেখতে দেশি গরুর চেয়ে বড় হয়ে থাকে। রং বিভিন্ন হয়ে থাকে, শিং গুলো বাকানো হয়ে থাকে, চামড়া টাইট থাকে। উন্নত জাতের গরুর ওজন ২০০ থেকে ৫০০ কেজি হয়ে থাকে। উন্নত জাতের গরুর দুধের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু পুষ্টিগুণ কম হয়ে থাকে।

শেষ কথা

আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url