চোখের নিচে কালো দাগ দুর করার উপায় - চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা কি কি

চোখের নিচে কালো দাগ দুর করার উপায় ও চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা কি কি এসব ধরনের কথা বার্তা জানতে হলে আপনি এই পোষ্টটি ভালো করে পড়ুন। তাহলে আপনি চোখের কালো দাগ দুর করতে পারবেন।
চোখের নিচে কালো দাগ দুর করার উপায়
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে চোখ উঠলে কি করতে হয় সে সম্পর্কে নতুন কিছু পয়েন্ট যোগ করা হয়েছে। আপনি যদি সে পয়েন্ট গুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে মনোযোগ সহকারে পড়েন। আশা করি তাহলে আপনি বুজতে পারবেন, যে চোখ উঠলে কি করতে হয়।

ভুমিকা

চোখ উঠা হলো চোখের কনজাঙ্কটিভার ইনফেকশন, যা মূলত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। চোখ উঠলে চোখ লাল হয়ে যায়, চোখে পানি পড়ে, চোখে খচখচ ভাব থাকে, চোখের কোনায় ময়লা জমা হয় এবং চোখ ফুলে যায়। চোখ উঠা ছোঁয়াছে রোগ, তাই এটি অন্য লোকের সঙ্গে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।


চোখ উঠা সাধারণত সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়, কিন্তু চোখের যত্ন নিতে হবে। চোখে নোংরা পানি বা ধুলাবালি যেন প্রবেশ না করে, চোখে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, চোখে হাত লাগানো যাবে না, চোখের অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে

এবং চোখে চুলকানি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করতে হবে। চোখের অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও চেখের নিচের কালো দাগ দুর করার উপায় গুলো নিচে জেনে নিন।

চোখের নিচে কালো দাগ দুর করার উপায়

চোখের নিচে কালো দাগ দুর করার জন্য আপনি কিছু সহজ এবং প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করতে পারেন। যেমন

  • আলু বা শসা স্লাইস করে কাটা ভিজিয়ে চোখের ওপর ১০-১৫ মিনিট রাখুন। এতে চোখের নিচের ত্বকের রং উজ্জ্বল হবে।
  • টমেটো ও লেবুর রস মিশিয়ে চোখের নিচে লাগান। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • ঠাণ্ডা দুধে একটি কটন বার ভিজিয়ে চোখে লাগান। দশ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দুধের লাক্টিক এসিড চোখের নিচের ত্বকের রং উজ্জ্বল করে।
  • পুদিনাপাতা পেস্ট করে চোখের নিচে লাগান। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পুদিনাপাতা চোখের নিচের কালো দাগ ও ক্লান্তি দূর করে।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার জন্য আপনি আরও কিছু উপায় জানতে চাইলে। এছাড়াও আপনি চোখের নিচে কালো দাগ এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন। যেমন পর্যাপ্ত ঘুম নিন। ঘুমের অভাব চোখের নিচের ত্বকের রঙ কালো করে। রোদে বের হলে সানগ্লাস বা সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। রোদের উত্তেজনা চোখের

নিচের ত্বকের কলাজেন ক্ষয় করে। অতিরিক্ত ধূমপান, অ্যালকোহল বা ক্যাফিন এড়িয়ে চলুন। এই জিনিসগুলি চোখের নিচের রক্তনালীগুলি বিকৃত করে। স্বাস্থ্যকর খাবার খান। ভিটামিন C, E, K ও আয়রন যুক্ত খাবার চোখের নিচের ত্বকের স্বাস্থ্য বারাতে সাহায্য করে।

এই উপায়গুলি অনুসরণ করে আপনি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে পারেন। তবে, যদি এই সমস্যা বারবার হয় তবে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। আশা করি আপনি এই তথ্যগুলি অনুসরণ করলে উপকার পাবেন।

চোখের সমস্যা হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়

চোখের সমস্যা হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। সে লক্ষণ গুলো নিচে দেওয়া হলো-

  • চোখ লাল এবং ফোলা।
  • চোখে চুলকানি এবং পানি বের হওয়া।
  • চোখ করকর করা এবং অস্বস্তি অনুভব করা।
  • দুর্বল দৃষ্টিশক্তি হওয়া।
  • চোখের মধ্যে এবং চারপাশে ব্যাথা করা।
  • অস্পষ্ট, ঝাপসা এবং দুটো করে দেখা।
  • দাগ যুক্ত দৃষ্টির উপস্থিতি করা।
  • চোখের তারার রঙিন অংশে রঙের পরিবর্তন।
  • আলোতে সংবেদনশীলতা।
  • দৃষ্টিশক্তি হারানো।
  • চোখ বন্ধের সময় পর্দা সংবেদনশীল হওয়া।

এই লক্ষণগুলি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন সংক্রমণ, আঘাত, রোগের অবস্থা, চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ, ভিটামিন A অভাব, বংশগত জিনের রোগ, অ্যালার্জি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বয়স বৃদ্ধি ইত্যাদি। চোখের সমস্যা হলে নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করানো উচিত। চোখের পরীক্ষা সাহায্য করবে ভিতরের রোগের লক্ষণ এবং উপসর্গ নির্ণয়ে।


ও পথ্যামোলজিস্ট চোখের ডাক্তার চোখের রোগ নির্ণয় করবেন বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে, যেমন চোখের পরীক্ষা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, ফান্ডোস্কোপি, টোনোমেট্রি, ইসিহারা কালার প্লেট পরীক্ষা করা ইত্যাদি। চোখের রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের অবস্থার উপর। এখানে চোখের চিকিৎসাগুলি বর্তমানে উপলব্ধ রয়েছে

  • কন্টাক্ট লেন্স বা লেজার পদ্ধতির মাধ্যমে চশমার ব্যবহার চোখের দৃষ্টি শক্তির চিকিৎসা করা।
  • অ-মেডিকেটেড চোখের ড্রপ বা চোখের জেল শুকনো চোখকে তৈলাক্ত করে।
  • মেডিকেটেড চোখের ড্রপ অ্যালার্জি, গ্লূকোমা এবং চোখের সংক্রমণ সারাতে সাহায্য করে।
  • ডায়বেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য লেজার চিকিৎসা।
  • ছানি এবং রেটিনার বিচ্যুতিতে অস্ত্রোপাচার প্রয়োজন।
  • ম্যাকুলার ডিজেনারেশন নিয়ন্ত্রণ করতে ফটোডায়নামিক থেরাপি।
  • শুকনো চোখের চিকিৎসার জন্য ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পুষ্টিকর উপাদান।
  • জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন চোখের রোগকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে পুষ্টিকর খাদ্য এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, ধূমপান বন্ধ করা, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন, রোদ চশমা ব্যবহারের সাথে চোখকে রক্ষা করুন।
  • যদি আপনি চোখের সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।

চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা কি কি

চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে আপনি নিচের কিছু কিছু নিয়ম গুলো অনুসরন করতে পারেন।

  • চোখে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে চোখের ময়লা ও পুঁজ দূর হবে। একই কাপড় বা তুলা দুটি চোখের জন্য ব্যবহার করবেন না।
  • চোখে বরফ বা ঠান্ডা পানি দিয়ে সেক করুন। এতে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া ও জ্বালাপোড়া কমবে।
  • চোখে কুচি করবেন না। এতে চোখের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। চোখে স্পর্শ করার পর হাত পরিষ্কার করুন।
  • চোখে কোনো কসমেটিক বা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করবেন না। এতে চোখের আলো সহ্য করা কঠিন হতে পারে।
  • চোখের সাথে কোনো ধুলাবালু, ধোঁয়া বা কীটনাশক যোগাযোগ করবেন না। এতে চোখের সমস্যা বাড়তে পারে।
  • চোখের সমস্যা যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ভালো না হয়, তবে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা অন্য কোনো ঔষধ প্রদান করতে পারেন।

চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা করার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করুন। চোখ উঠার কারণ হতে পারে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা এলার্জি। এই সমস্যা ছোঁয়াচে বিস্তারিত হতে পারে। তাই আপনার ব্যবহৃত জিনিসপত্র অন্যের থেকে দূরে রাখুন। আশা করি তাহলে আপনি শীঘ্রই সুস্থ হবেন। এছাড়াও আপনি চশমা পরিধান করলে

চোখে স্পর্শ কম হবে এবং ধুলাবালু ও ধোঁয়া থেকে আপনার চোখকে রক্ষা করবে। আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার চোখের ব্যাথা ও লাল দাগ কমে যাবে। চোখের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ এ সময় করা যাবে না। যেমন বেশিক্ষণ মোবাইল বা

কম্পিউটারে থাকা বা ছোট ছোট লেখা পড়া যাবে না। এই সব পরিষ্কার করার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, চোখ উঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ এবং এটি অন্য কাউকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই, যদি চোখ উঠে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না

চোখ উঠলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে তা না হলে চোখ ফুলে গিয়ে খারাপ হয়ে যেতে পারে। চলুন নিচে দেখে নি উপায় গুলো কি কি-

  • বেশি চিনিযুক্ত খাবার।
  • রিফাইন্ড খাবার।
  • প্রসেসড মিট।
  • অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার।
  • ক্যান জাতীয় খাবার।
  • অখাজ খাবার যেমন ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, বেগুন, সিম ইত্যাদি।

এই খাবারগুলো চোখের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই চোখ উঠলে এগুলো খাওয়া যাবে না। চোখ উঠলে আপনি বিট লবণ, ত্রিফলা, আমলকী, কিশমিশ, মধু ও ঘি এগুলো খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এই খাবার গুলো চোখের জন্য ভালো।

আশা করি আপনি যদি এই সব নিয়ম গুলো মেনে চলেন তাহলে আপনার চোখ উঠা ভালো হবে। আপনার যদি খুব বেশি চোখ ব্যাথা হয় বা বেশি চোখ লালচে হয়ে থাকে তাহলে আপনার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

চোখ উঠা সারতে কত দিন লাগে

চোখ উঠা রোগ হলো চোখের কনজাংটিভা নামক পর্দার প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন। এ রোগ সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় এবং ছোঁয়াচে। চোখ উঠা রোগের লক্ষণ হলো চোখ লাল হওয়া, চোখে পানি পড়া, চোখে কেতুর জমা, চোখে ব্যথা বা জ্বালাপোড়া, আলো সহ্য না করা, চোখের পাতা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।


চোখ উঠা রোগ সারতে সাধারণত একটি মানুষের ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই চোখ উঠা ভালো হয়ে যায়। তবে, অনন্য মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। চোখ উঠা রোগ প্রতিরোধে এবং চিকিৎসায় নিম্নলিখিত করণীয় গুলো মেনে চলতে হবে। চোখ উঠা রোগ ছোঁয়াচে, তাই রোগীর ব্যবহৃত জিনিস গামছা, তোয়ালে, রুমাল অন্যের সাথে ভাগ করা যাবে না।

  • রোগী কালো চশমা পরবে এবং ভিড় এড়িয়ে চলবে।
  • রোগী হাত দিয়ে চোখ চুলকাবে না এবং হাত নিয়মিত পানি দিয়ে ধুবে।
  • রোগী চোখ মোছার জন্য আলাদা কাপড় ব্যবহার করবে এবং প্রতিদিন পরিষ্কার করবে।
  • রোগী সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, তবে প্রয়োজনে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার বা অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে।
  • রোগী নিজে নিজে ওষুধের দোকান থেকে কোনো ধরনের ড্রপ নিয়ে ব্যবহার করবে না, কারণ এতে চোখের জটিলতা বাড়তে পারে।
  • রোগী যদি চোখের খচখচে ভাব বেশি হয়, বেশি পরিমাণে কেতুর জমে, চোখে ঝাপসা দেখে, চোখে রক্ত পড়ে, তাহলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।
  • চোখ উঠা রোগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ থেকে বাঁচা যায়। আশা করি আপনার চোখ শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে।

লেখকের শেষ কথা

আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url