ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে - ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে ও ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা এসব
ধরনের বিভিন্ন তথ্য গুলো পেতে হলে আপনি এই পোষ্টটি পড়ুন। তাহলে আপনি ডেঙ্গু জ্বর
সম্পর্কে বিষয় গুলো বুজতে পরবেন।
আপনার জন্য এই পোষ্টের নিচের দিকে ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে আরো কিছু পয়েন্ট যোগ করা
হয়েছে। সে পয়েন্ট গুলো আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে মনোযোগ সহকারে
পড়েন। আশা করি তাহলে আপনি ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে অজানা বিষয় গুলো বুজতে পারবেন।
ভুমিকা
ডেঙ্গু জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। ডেঙ্গু
জ্বরের লক্ষণ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে
ফুসকুড়ি। ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে এবং বেশি করে তরল খাবার
গ্রহণ করতে হবে। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে
কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক ও
আরো পড়ুনঃ
পেটে গ্যাস হলে কি কি সমস্যা হতে পারে
ননস্টেরয়েডাল প্রদাহপ্রশমী ওষুধ সেবন করা যাবে না করলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে
যায়। ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় হচ্ছে এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলা। তাই
মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। আপনি যদি আরো কিছু
জানতে চান তাহলে আপনি নিচের পয়েন্ট গুলো পারেন।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি গোসল করা যাবে
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গোসল করা যেতে পারে। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী হতে পারে। কিন্তু কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। সে বিষয় গুলো নিচে দেওয়া হলো
গোসলের সময় জ্বরে গোসল করতে হলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন। গোসল করলে আপনার
জ্বর কমে যাবে এবং পেশী শিথিল হবে। হালকা গরম পানিতে গোসল করলে
শরীরের ব্যথাও কমে যাবে। খুব বেশি জ্বর হলে খুব ঠান্ডা পানিতে গোসল করা
উচিত নয়, কারণ এটা ক্ষতিকর হতে পারে। গোসলের সময় শরীরের সব অংশ ভালো করে পানি
দিতে হবে। শুধু মাথায় পানি দিলে কাজ হবে না। গোসলের পর শরীর ভালো করে শুকিয়ে
নিতে হবে। ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা করতে পারলে আরও ভালো।
গোসলের আগে ও পরে প্রচুর পরিমাণে তরল ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন- লেবুর
শরবত, ডাবের পানি, ফলের জুস ইত্যাদি। জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে
পারেন, কিন্তু অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ
গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হবে,
যদি শরীরের সব জায়গা বেশি তাপমাত্রা হয় তখন সম্পূর্ণ শরিরকে পানি ভেজা কাপড়
দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে। তবে, সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকলে গোসল করলে কোন ক্ষতি হয়
না। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া জ্বর নিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। আর শরিরে
বেশি জ্বর হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে। তাই ডেঙ্গু জ্বর রোগিদের
প্রচুর পরিমাণে তরল ধরনের খাবার গ্রহণ করা উচিত। যেমন, লেবুর শরবত, ডাবের পানি,
ফলের রস, সবজির স্যুপ, দুধ, খাওয়ার স্যালাইন ইত্যাদি। এছাড়া, পেঁপের পাতার রস
গ্রহণ করতে পারেন,
যা রক্তের প্লেটলেট বাড়াতে সাহায্য করে। ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল বাদে অন্য
কোনো ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে নিচে কিছু তথ্যে গুলো দেওয়া হলো।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে আপনি নিচের খাবার গুলো খেতে পারে।
- স্যালাইন পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ খেতে হবে।
- ডাবের পানি বেশি করে খেতে হবে ডাবের পানিতে শরিরের অনেক উপকারি হয়।
- বিভিন্ন মৌসুমের ফলের রস খেতে হবে তাহলে তারা তারি ডেঙ্গু জ্বর ভালো হবে।
- ফলের রস গ্রহণ করা উচিত। ফলের রসে ভিটামিন সি আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- পেঁপের পাতার রস গ্রহণ করা উচিত। পেঁপে পাতার রসে কাইমোপ্যাপিন ও প্যাপাইন রয়েছে, যা রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
- ডেঙ্গু জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশি করে পানিজাতীয় ফল খেতে হবে।
- সবজির স্যুপ, টমেটোর স্যুপ, চিকেন স্যুপ বা কর্ন স্যুপ গ্রহণ করা উচিত এবং দুধ, ডিম ও এগুলোর তৈরি নানা খাবার, মাছ ও মুরগি খেতে হবে।
- আর সুস্থ থাকার জন্য আপনাকে বেশি বেশি করে পানি খেতে হবে।
তবে, এই সব খেলে আপনার যদি কোন সমস্যা থাকে তবে আপনার এই ফল গুলো খাওয়ার আগে
ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা উচিত। যেমন, ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল
খাওয়া যাবে, কিন্তু অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর হলো একটি মশা-বাহিত ভাইরাল রোগ, যা উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের
পিছনে ব্যথা, মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং
রক্তপাত এর মতো লক্ষণ দেখায়। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা হলো বিশ্রাম, প্রচুর
পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করা এবং প্যারাসিটামল ব্যতীত অন্য কোন ঔষধ না
খাওয়া। ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর উপসর্গ গুলি
হলো প্রচণ্ড পেট ব্যথা, ক্রমাগত বমি হওয়া, মারি বা নাক থেকে রক্তপাত, প্রস্রাবে
এবং মলের সাথে রক্তপাত, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস,
ক্লান্তি, বিরক্তি এবং অস্থিরতা। এই উপসর্গ গুলি দেখা দিলে অতি তারা তারি
অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত বা রোগী কে নিকটবর্তী হসপিটালে
ভর্তি করানো দরকার। এছাড়াও আরো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো হলো
- হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর
- তীব্র মাথাব্যথা
- চোখের পিছনে ব্যথা
- পেশি ও অস্থিসন্ধিতে গুরুতর ব্যথা
- ক্লান্তি
- ডেঙ্গু জ্বর হলে ত্বকে ফুসকুড়ি উঠবে যা শরিরে জ্বর আসার ২ থেকে ৫ দিন পরে দেখা দিয়ে থাকে।
- নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে অল্প রক্তপাত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ডেঙ্গু জ্বর বহনকারী এডিস
মশার প্রজনন ও বিস্তার রোধ করা।
- মশার ডানা দিতে পারে এমন জলস্থল শুকিয়ে ফেলা।
- পানির ট্যাঙ্ক, বালতি, কলসি, কুপ, টাব, ফুলদানি ইত্যাদি পানি ভরা জিনিস পাত্রে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা।
- পানি ভরা জিনিস পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা।
- মশার জাল বা মশার ডানা দিতে পারে এমন জায়গা যেমন চালের ভান্ডার, পুরাতন টায়ার, বোতল, ক্যান, কুপ ইত্যাদি পরিষ্কার করে রাখা।
- মশার জাল বা মশার ডানা দিতে পারে এমন জায়গা যেমন পাখির খাওয়ার জায়গা, পানির ফোটা, ফুলদানি, বালতি, কলসি, কুপ, টাব, ট্যাঙ্ক, ইত্যাদি পানি ভরা জিনিস পাত্রে পানি পরিবর্তন করা। এই জিনিস গুলোতে তেল, কেরোসিন, ব্লিচিং পাউডার ইত্যাদি মিশিয়ে দেওয়া।
ডেঙ্গু জ্বর থেকে বাচার জন্য যে যে চিকিৎসা গুলো দরকার সে গুলো হলো-
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। একজন স্বাভাবিক মানুষ যে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে।
- ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অতি তারা তারি দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত বা রোগী কে নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি করানো দরকার।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বর হলে একটি মানুষের সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন পর্যন্ত জ্বর হয়ে থাকে।
জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার প্রায় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা এই সময়টাকে বলা হয় ঝুঁকিপূর্ণ সময়।
কারণ, ডেঙ্গু রোগজনিত বিভিন্ন জটিলতা এ সময়ে হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই জ্বর
সেরে গেলে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার পরেও রোগীকে
অবজারভেশনে
রাখা প্রয়োজন, কারণ ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গু
জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে নিচের পয়েন্ট গুলো পড়ুন।
এছাড়াও, রোগীকে জ্বর হওয়ার ১২ দিন পর্যন্ত রোগীকে অবজারভেশন বা লক্ষ্য নজরে রাখতে
হয়। তবে ডেঙ্গু জ্বর হলে দেরি না করে তারা তারি ডাক্তারের কাছে অথবা হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে করণীয় কি
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর
প্রতিরোধের জন্য আপনি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যেমন -
মশারিতে ঘুমান, মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা, মশার প্রতিরোধক লোষণ বা ক্রিম
ব্যবহার করা ইত্যাদি। এছাড়াও ডেঙ্গু জ্বর হলে অনেক ধরনের নিয়োম কানুন মেনে চলতে
হয়। সে নিয়ম গুলো নিচে দেওয়া
হলো প্রথমে চিকিৎসকের কাছে যান এবং পরীক্ষা করান। চিকিৎসক আপনাকে প্যারাসিটামল
বা অন্য কোনো ঔষধ প্রদান করবেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হলে বলবেন।
পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন এবং প্রচুর পরিমাণে তরল ধরনের খাবার গ্রহণ করুন। যেমন -
ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে
অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক,
আরো পড়ুনঃ
মশা তাড়ানোর উপায় গুলো কি কি
আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। এই ঔষধ গুলো খেলে মানুষের শরিরে
রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত হবেন
না। প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোনো প্রয়োজন নেই। প্ল্যাটিলেট
কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে বা শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হলে প্রয়োজন
বোধে প্লাটিলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে।
- যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম নিন প্রথম তিন দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন।
- বার বার পানি দিয়ে পুরো শরীরে স্পঞ্জ করুন। এতে জ্বরের মাত্রা কমে যাবে।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে এমন খাবার খেতে হবে, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা, মটরশুটি ইত্যাদি।
- ডেঙ্গু জ্বরের সন্দেহ থাকলে ডায়াগনস্টিক টেস্টিং করা উচিত।
- এই সমস্যাগুলি যদি বাড়াতে থাকে তাহলে আপনাকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আপনাদের সকলের কাছে যদি আমার পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে পোষ্টটি আপনাদের
বন্ধু-বান্ধবী সকলের মাঝে শেয়ার করে দিন। আর নিয়মিত আমার কাছে থেকে পোষ্ট
পাওয়ার জন্য আমার ওয়েবসােইটটি ফলো করে রাখুন। নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url